বাংলাদেশ | বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৪ | ৩০ কার্তিক,১৪৩১

বিরোদী দল

15-02-2018 12:26:32 PM

খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপির অনশন

newsImg

বন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দিনব্যাপী অনশন কর্মসূচি পুলিশের পীড়াপীড়িতে তিন ঘণ্টা আগে শেষ করেছে বিএনপি।
বুধবার বিকাল ৪টায় শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাদুর পেতে অনশনে বসেছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাসহ তাদের জোটসঙ্গী দল এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিস্থল ঘিরে রাখার পর পুলিশ কর্মকর্তারা দুপুরের মধ্যে তা শেষ করতে বলেন বিএনপি নেতাদের।

তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমাদের অনশন কর্মসূচি ৪টা পর্যন্ত্ম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমরা এটা ১টা পর্যন্ত্ম করে দিয়েছি।'
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপি নেতাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা -যাযাদিগত ৮ ফেব্রম্নয়ারি খালেদা বন্দি হওয়ার পর দুদিনের বিক্ষোভের পর মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি শেষে এই প্রতীকী অনশনে বসে বিএনপি। অনশন চলার সময় নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে টানা স্স্নোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন কর্মীরা।
কর্মসূচির সমাপ্তি টেনে মির্জা ফখরম্নল বলেন, 'আমরা এই অনশন কর্মসূচি থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি এবং সব ধরনের নির্যাতনমূলক কর্মকা- থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।'
স্থায়ী কমিটির কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'সরকার দেশনেত্রীকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চায়, সেই চক্রান্ত্ম তারা করছে। আমরা বলে দিতে চাই, বেগম জিয়া ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেব না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে।'
স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, 'খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। আমরা এই রায় মানি না। এই রায় হলো একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাদের নেত্রীকে দুর্বল করার জন্য।'
শান্ত্মিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই দলীয় নেত্রীকে মুক্ত করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, 'দেশনেত্রীকে বন্দি করা হয়েছে, আজ পর্যন্ত্ম তার রায়ের কাগজ দেয়া হয়নি। দীর্ঘসূত্রতা করে তাকে আটকে রাখার ষড়যন্ত্র করছে।'
যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, 'দেশনেত্রী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলেছেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সবাইকে বলে দিতে চাই, এটাকে কেউ দুর্বলতা ভাববেন না। জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক সৈনিক একজন বেঁচে থাকতে ষড়যন্ত্রকারীরা কেউ পার পাবে না।'
২০ দলীয় জোটের শরিক বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, 'সরকারকে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের কোনো আদালতের খোঁচায় কিংবা কোনো নির্বাহী আদেশের কলমের খোঁচায় তাকে বন্দি করে রাখা যাবে না, তাকে ছাড়া কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা যাবে না।'
সরকারকে হুশিয়ার করে তিনি বলেন, 'আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হবেন বাংলাদেশের, ইনশাআলস্নাহ। আমরা তাদের বিচার করব।'
অনশনকালে সমাবেশে সঞ্চালনায় ছিলেন প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল।
প্রেসক্লাবের সামনের এই কর্মসূচিতে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অবস্থানে সড়কের এক পাশে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ অনশনস্থল ঘিরে রেখে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা বেষ্টনী ছোট করে আনে, ফলে সকাল ১০টায় যে বেষ্টনী ছিল সচিবালয়ের মোড় থেকে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত্ম তা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফটকের চারপাশের এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
অনশনের শেষ দিকে ভিড় ডিঙিয়ে জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম অনশনস্থলে আসেন। তিনি দুই মিনিট থেকে নেতাদের সঙ্গে করমর্দন করে চলে যান।
তিন ঘণ্টার অনশন কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিশের মওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্ত্মফা জামাল হায়দার, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির একাংশের মোস্ত্মাফিজুর রহমান ইরান, অন্য অংশের হামদুলস্নাহ আল মেহেদী, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ন্যাপের গোলাম মোস্ত্মফা ভুঁইয়া।
বিএনপি সমর্থক শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীও অনশনের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। অনশনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমীর খসরম্ন মাহমুদ চৌধুরী, আতাউর রহসান ঢালী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রম্নল কবির খোকন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, কাজী আবুল বাশার, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, মোরতাজুল করীম বাদরম্ন, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আনোয়ার হোসেইন, মামুনুর রশীদ, আসাদুজ্জামান আসাদ।
অনশনে উপস্থিত ছিলেন নজরম্নল ইসলাম খান, শাহজাহান ওমর, বরকতউলস্নাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারম্নক, হাবিবুর রহমান হাবিব, জিয়াউর রহমান খান, নুরম্নল ইসলাম খান নাসিম, গাজী মাজহারম্নল আনোয়ার, ফজলুল হক মিলন, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কামরম্নজ্জামান রতন, নুরী আরা সাফা, ওবায়দুল ইসলাম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরাফত আলী সপু, আমিনুল হক, মোস্ত্মাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, সাইফুল আলম নিরব, আহসানউলস্নাহ হাসান, সেলিমুজ্জামান সেলিম, হারম্ননুর রশীদ, বেবী নাজনীন, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, জয়ন্ত্ম কুমার কুন্ড, আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম, শামীমুর রহমান শামীম, কাদের গনি চৌধুরী, আমিরম্নজ্জামান শিমুল, রফিক শিকদার, নিপুর রায় চৌধুরী, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, হেলাল খান, হেলেন জেরিন খান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, হাফেজ এম এ মালেক, শাহ নেসারম্নল হক।
জাতীয় প্রেসক্লাবে না এসে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশনে বসেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রম্নহুল কবির রিজভী, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদসহ অফিস কর্মীরা।
নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় ঘিরে পুলিশের বেষ্টনী থাকায় তারা গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে অফিসের ভেতরেই থাকছেন।
ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক

ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইইউ প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা, খালেদা জিয়ার রায় এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইইউ প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। ভোটাররা যাতে ভোট দিয়ে মত জানাতে পারে, সে বিষয়টি তারা পরিষ্কারভাবে বলেছে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদলটি মূলত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ দেশে এসেছে। তারা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসেছে এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছে।
খালেদা জিয়ার সাজার রায়ের পর বিশ্ব সম্প্রদায় তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আইন, আইনের শাসন, বিচার বিভাগ এবং আদালতের রায়-এসব বিষয়ে বিদেশিদের নিজস্ব ‘নর্মস অ্যান্ড ভ্যালুজ’ আছে। তাদের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থা বুঝতে বেগ পেতে হয়। তাদের যে সংস্কৃতি এবং আমাদের এখানকার যে অবস্থা তা তারা মেলাতে পারে না। যে কারণে হয়তো বা তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যেসব পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হবে, সেসব তারা পর্যবেক্ষণ করছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের সময় ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা, সেটা তারা ভাবছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা (ইইউ) কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। এ কারণে তারা এখনো আশা করে, এ দেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
ইইউর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।
ইইউ পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান জিন ল্যামবার্টের নেতৃত্বে ইইউ প্রতিনিধিদলের মধ্যে রয়েছেন জেমস নিকোলসন, রিচার্ড করবেট এবং ওয়াজিদ খান।
এর আগে মঙ্গলবার বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল বিএনপি। বৈঠকে খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে বিএনপি।
তিন দিন কর্মসূচি 
নেই বিএনপির
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপির আগামী তিন দিন কোনো কর্মসূচি নেই। রোববার থেকে নতুন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।
বুধবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার কোনো কর্মসূচি নেই। আজ আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’ খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে দুই দিন সারাদেশে বিক্ষোভ করে বিএনপি। এরপর তারা টানা তিনদিনের কর্মসূচি দিয়েছিল, যা বুধবার অনশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
তিনদিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার দেশব্যাপী মানববন্ধন এবং মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

 

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- i-news24
এই খবরটি মোট ( 6423 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends