সরকারী দল

13-02-2018 11:39:11 AM

জাপা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তায়’ আ. লীগ শক্ত প্রার্থী আছে বিএনপির

newsImg

দশম সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনটি কৌশলগত কারণে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপির বয়কটের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির টিকিটে ফখরুল ইমাম বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে ফাঁকা মাঠ থাকছে না। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ যদি জাতীয় পার্টিকে জোটভুক্ত করে নির্বাচন করে সে ক্ষেত্রে এ আসনে আবারও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে—এমন সম্ভাবনার কারণে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আছেন দুশ্চিন্তায়। আর বর্তমান সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম জাতীয় পার্টি থেকে আবার প্রার্থী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত।

তার পরও আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশ মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতাকে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই গণসংযোগ করে যাচ্ছে। তবে দলটির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সক্রিয় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুছ ছাত্তারসহ আরো কয়েকজন নেতা। বিএনপির নেতাকর্মীরা একজন সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে বেশ খোশমেজাজেই আছে। তবে দলটিতে আরো কয়েকজন নেতা আছেন, যাঁরা মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে ১৬২ আসনের মধ্যে মাত্র দুটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হন। ওই দুই আসনের একটি ময়মনসিংহ-৮। স্বাধীনতা-পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে মোট চারবার জাতীয় পার্টি, তিনবার করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জয়লাভ করে।

১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদের ১৫৩ নম্বর নির্বাচনী এলাকা।

জাতীয় পার্টি : বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম এ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষ হিসেবে পরিচিত থাকলেও নির্বাচনী এলাকায় কম আসায় তাঁকে নিয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আছে। পাশাপাশি আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে এমপিদের জন্য বরাদ্দকৃত ২০ কোটি ও জিওবি ফান্ড থেকে প্রাপ্ত ২০ কোটি মোট ৪০ কোটি টাকা উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। তা ছাড়া বিভাগীয় উন্নয়ন ফান্ড থেকে ৯২ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ এনেছি। স্পেশাল ইকোনমিক জোন হচ্ছে এখানে। এর কাজ অতিদ্রুত শুরু হবে।’ ভবিষ্যতে এলাকার উন্নয়নে নেওয়া আরো কিছু পদক্ষেপের বিষয়ও উল্লেখ করেন তিনি।

আগামী নির্বাচনে কি ‘ফাঁকা মাঠ’ পাবেন—এমন এক প্রশ্নের উত্তরে সংসদ সদস্য বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছি। এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি একক নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। তবে পরবর্তী সময়ে জোট হলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ : ১৯৭৩ সালে ঈশ্বরগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুল কাদির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর দীর্ঘ সময় পর ১৯৯৬ সালে দলটির টিকিটে আব্দুছ ছাত্তার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদকে হারিয়ে। ওই সময় এলাকায় দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন করে আস্থা অর্জন করলেও দলীয় কোন্দলের কারণে ২০০১ সালে পরাজিত হন তিনি। পরে ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুছ ছাত্তার। এরপর থেকে বিভিন্ন কারণে দলীয় লোকজনের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁর ভাতিজা শিল্পপতি মাহমুদ হাসান সুমন রাজনীতিতে দৃশ্যমান হয়ে ওঠেন। দশম সংসদ নির্বাচনে আব্দুছ ছাত্তারের মনোনয়ন নিশ্চিত হলেও আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। নির্বাচনের পর তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে এরই মধ্যে দুটি ধারা তৈরি হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় কোন্দল। বেশির ভাগ নেতাই আব্দুছ ছাত্তারকে ছেড়ে তাঁর বড় ভাইয়ের ছেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের সঙ্গে যোগ দেয়।

আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন মাহমুদ হাসান সুমন। তিনি দাবি করেন, দলের একটা বিশাল অংশ তাঁর সঙ্গে রয়েছে। তাঁর সমর্থকরা মনে করে, সুমন সব কিছুই গুছিয়ে এনেছেন। এখন শুধুই নৌকা প্রতীক পাওয়ার অপেক্ষা।

তবে এ কথা মানতে নারাজ সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুছ ছাত্তার। তিনি বলেন, ‘আমি আমিই। ঈশ্বরগঞ্জের মাটিতে আমার সাথে তুলনা করার লোক নেই। আমি দুবার এমপি হয়েছি বিপুল ভোটের ব্যবধানে। স্বাধীনতার পর ঈশ্বরগঞ্জের যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে সব আমার অবদান।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার আমিই মনোনয়ন পাব, এটা প্রায় নিশ্চিত। নব্য আওয়ামী লীগাররা নাচানাচি করেও কোনো ফল পাবে না।’

অন্যদিকে মনোনয়ন বিষয়ে মাহমুদ হাসান সুমন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তরুণ ও জনপ্রিয় নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। সেই হিসেবে আমি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাদের ভোটে মনোনয়ন পাই এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত হই।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিনিয়তই দৃশ্যমান উন্নয়ন করে যাচ্ছি। দুস্থ, অসহায় ও সাবেক এমপির আমলে অবহেলিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা ছাড়াও আপদে-বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আমি নৌকা প্রতীক পেলে এই আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চিত উপহার দিতে পারব।’

এ ছাড়া এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে যাঁরা আলোচনায় আছেন তাঁরা হলেন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৌমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম।

সৌমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী আশা প্রকাশ করে বলেন, বিপুল ভোটে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে এলাকার উন্নয়ন করেছেন। চাচা-ভাতিজার কোন্দলের কারণে তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এ আসনটি উপহার দিতে পারবেন।

বিএনপি : আসছে নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নুরুল কবির শাহীন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী লুত্ফুল্লাহেল মাজেদ বাবু, ময়মনসিংহ (উত্তর) জেলা যুবদল সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামান লিটন ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শিক্ষানুরাগী অ্যাডভোকেট আওরঙ্গজেব বেলাল।

এ ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) থেকে নির্বাচন করতে চান দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ বাশার।

নুরুল কবির শাহীন ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে পরাজিত হয়ে ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে যান। মাঝেমধ্যে এলাকায় এসে তিনি গণসংযোগ করে আবারও চলে যান। বিএনপির একটা অংশ তাঁর সঙ্গে থাকলেও দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ডে তাঁকে দেখা যায় না। অবশ্য তাঁর দাবি, মনোনয়ন পেলে সব দ্বিধাবিভক্তির অবসান ঘটবে এবং তাঁর সঙ্গেই থাকবে জাতীয়তাবাদী শক্তি।

অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি লুত্ফুল্লাহেল মাজেদ বাবু খুব অল্প দিনেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। নিজের অবস্থান শক্ত করতে তিনি মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের নতুন করে সংগঠিত করছেন। দল গোছাতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার রায়ের বিরুদ্ধে একমাত্র তিনিই দলবল নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় তিনিও আহত হন। বিস্ফোরক আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এসব কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কাছে বড় একটা ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারেন।

লুত্ফুল্লাহেল মাজেদ বলেন, ‘আমি কারো সাথে বিভেদ সৃষ্টি করতে রাজনীতিতে আসিনি। এলাকার মানুষের সুখশান্তির জন্য আমি রাজনীতি করতে চাই। এটাই আমার ইচ্ছা।’

সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান উপজেলা যুবদলের সভাপতি কামরুজ্জামান লিটন সাংগঠনিক অনেক কমর্কাণ্ডে সম্পৃক্ত। সেই সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারও চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে তিনি এলাকায় থেকে কাজ করছেন। ২৬টি মামলা মাথায় নিয়ে তিনি দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এ আসনটি উপহার দিতে পারবেন বলে প্রত্যয় জানিয়েছেন লিটন।

বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আওরঙ্গজেব বেলাল বলেন, দলে তিনি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষ হিসেবে পরিচিত। দলের মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশা করছেন তিনি।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে লবিং শুরু করেছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. রুহুল আমিন মাস্টার। নব্বইয়ের স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্রদল নেতা ছিলেন। ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। গত বছর অবসরে যাওয়ার পর তিনি এলাকায় এসে গণসংযোগ শুরু করেছেন।

রুহুল আমিন বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী। সেই সঙ্গে তিনি মনোনয়ন পেলে দলে বিরাজমান কোন্দলের অবসান হবে বলেও দাবি তাঁর।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ বাশার বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। গত চার বছরে তিনি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নে সাধ্যমতো সহযোগিতা করে আসছেন। ২০ দলীয় জোটের মনোনয়নে তিনি নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন।