বাংলাদেশ | বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪ | ১০ বৈশাখ,১৪৩১

বানিজ্য

26-04-2016 06:12:41 PM

তেল-গ্যাসের সংকটে নাজুক বিদ্যুৎ পরিস্থিতি

newsImg

বৃষ্টিহীন বৈশাখের প্রচণ্ড বিরূপ আবহাওয়া তো আছেই, তার সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহে সংকট ও গ্যাসের ঘাটতিদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতিকে নাজুক করে ফেলেছে। উৎপাদনক্ষমতা থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আবার উৎপাদন যা হচ্ছে, তারও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার জন্য।

এই সীমাবদ্ধতা ছাড়াও একটানা প্রায় তিন সপ্তাহ একমাত্র সিলেট ছাড়া দেশের কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়ামণ্ডলের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদনকেন্দ্র, সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থা মাত্রাতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ফলে এগুলোর দক্ষতা কমেছে।
কিন্তু অস্বাভাবিক গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। এই বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য দরকার বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো। তবে জ্বালানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকটের প্রথম কারণ, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয় কারণ, নৌযানশ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ইতিমধ্যে তেলচালিত সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র যেকোনো সময় বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এই কেন্দ্রগুলোর মোট ক্ষমতা ৬১০ মেগাওয়াট। আর চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে ১১৬০ মেগাওয়াট।
পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। কিন্তু জ্বালানি-সংকটের কারণে উৎপাদন সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি রাখতে হচ্ছে।
ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী দুটি কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডেসকো) সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে এই দুটি কোম্পানির মোট লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট।
ঢাকার বাইরে প্রতিটি শহর-নগরে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর পল্লী বিদ্যুতের (আরইবি) আওতাধীন বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলের অবস্থা বেশ খারাপ। আরইবির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সোমবার তাঁরা লোডশেড করেছে ১১৭৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে ২৬৫; ঢাকা অঞ্চলে (ডিপিডিসি ও ডেসকোর এলাকা ছাড়া) ৩৮৫; ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৫৯; যশোর ও খুলনা অঞ্চলে ১৩১; রংপুর অঞ্চলে ১২৩; চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮৩; কুমিল্লা অঞ্চলে ৮১; বরিশাল অঞ্চলে ৩০ ও সিলেট অঞ্চলে ২০ মেগাওয়াট লোডশেড করা হয়েছে।
এই লোডশেডিং ছাড়া সঞ্চালনব্যবস্থার সমস্যার কারণে ৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। বর্তমানে আরইবির দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা চার হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের সরবরাহ চাইলেও খুব একটা বাড়ানোর সুযোগ নেই। তবে জ্বালানি তেলের সরবরাহ যাতে ব্যাহত না হয়, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজকালের মধ্যেই নৌযানশ্রমিকদের ধর্মঘটজনিত সমস্যার সমাধান হতে পারে। এর ফলে তেল সরবরাহের সমস্যা মিটে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার দুপুরে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এক সভায় মিলিত হন। সেখানে নৌযানশ্রমিকদের কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ওই সভায় বলেছেন, আজকের মধ্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে এ ব্যাপারে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আরও দু-তিন দিন তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ফলে গরমও কমবে না। বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে না। 
দেশে এখন তেলচালিত কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় তেলচালিত কেন্দ্রগুলো এখন পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো দরকার। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ১৩০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ করা হচ্ছে ১০০ কোটি ঘনফুটের কিছু বেশি। সার কারখানাগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ রেখে সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরে তা আর করা হয়নি।

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- i-news24.com
এই খবরটি মোট ( 1015 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends